web analytics

হারানো টাকা ফিরত দিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র

রাস্তায় পড়ে ছিল ৩৫ হাজার টাকা। তা কুড়িয়ে পান (২৯ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের স্নাতকের ছাত্র মো. কামরুজ্জামান (২২)। প্রকৃত মালিককে টাকা ফিরিয়ে দিতে তিনি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শহরে মাইকিং করিয়েছেন। মালিককে পেয়ে টাকা ফিরিয়েও দিয়েছেন। কামরুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মজিবর রহমান খান।

image

প্রশ্ন:- টাকার মালিকের খোঁজে মাইকিং করানোর চিন্তাটা কীভাবে এল?

কামরুজ্জামান: টাকা পাওয়ার পর মনে হয়েছিল, এগুলো কোনো ব্যক্তির কষ্টের টাকা। হতে পারে কোনো পরিবারের কারও চিকিৎসার খরচ। তাই বিষয়টি আমি যেখানে কাজ করি, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানাই। তিনি মাইকিং করার পরামর্শ দেন।

প্রশ্ন:- টাকার মালিককে তো খুঁজে পেয়েছেন। তিনি কে?

কামরুজ্জামান: এক বৃদ্ধা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। টাকা কোথায় হারিয়েছিল, পরিমাণ কত, নোট কয়টি ছিল—তাঁর কাছে এসব তথ্য জানতে চাই। তিনি যে বর্ণনা দেন, তা মিলে যায়। এতে নিশ্চিত হই, টাকাগুলো তাঁর।

প্রশ্ন:- বৃদ্ধার টাকা কীভাবে হারিয়েছিল?

কামরুজ্জামান: তিনি একটি ঋণদানকারী সংস্থা থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে নাতিকে একটি ইজিবাইক কিনে দিয়েছেন। তখন ৩৫ হাজার টাকা বেঁচে যায়। সেই টাকা নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। পথে হারিয়ে যায়। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাচ্ছিলাম এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে পথে টাকাগুলো কুড়িয়ে পাই।

প্রশ্ন:- আর কেউ টাকা দাবি করেছিলেন?

কামরুজ্জামান: চারজন দাবি করেছিলেন। তবে তাঁদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে কুড়িয়ে পাওয়া টাকার পরিমাণের মিল পাওয়া যায়নি।

প্রশ্ন:- আপনার কি মনে হয়, ওই চারজন কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলেন?

কামরুজ্জামান: না, তা মনে হয় না। তাঁদের টাকা হয়তো হারিয়েছে। তা না হলে টাকা দাবি করবেন কেন? মানুষ এখনো এতটা খারাপ হয়নি।

প্রশ্ন:- আপনিই কি মালিকের হাতে টাকাগুলো তুলে দিয়েছিলেন?

কামরুজ্জামান: না। ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ছিলেন।

প্রশ্ন:- তাঁরা আপনাকে কিছু বলেছিলেন?

কামরুজ্জামান: তাঁরা আমাকে ভালো কাজের উৎসাহ দিয়েছেন।

প্রশ্ন:- টাকা পেয়ে মালিক কী বললেন?

কামরুজ্জামান: তিনি বলেছেন, আমি নাকি ভালো মানুষ। আল্লাহ আমার ভালো করবেন।

প্রশ্ন:- আপনার পরিবারে কে কে আছেন? তাঁরা কী বলেছেন?

কামরুজ্জামান: আমার পরিবারে দাদা-দাদি, মা-বাবা ও তিন ভাইবোন আছে। তারা তো খুবই খুশি।

আপনি তো পড়াশোনা করেন।

কামরুজ্জামান: হ্যাঁ। ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়ছি। পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একটি কারখানা দেখাশোনার কাজ করি। কারখানাটিতে শৌচাগারের সামগ্রী তৈরি হয়।

প্রশ্ন:- আয় কেমন?

কামরুজ্জামান: প্রতিষ্ঠানের মালিক আমাকে পড়ালেখার খরচ দেন।

প্রশ্ন:- মাইকিং করাতে কত টাকা লেগেছে?

কামরুজ্জামান: ৮০০ টাকা। এই টাকা অবশ্য এক ব্যক্তি দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর নাম বেলাল উদ্দিন। তিনি ঋণদানকারী সংস্থাটির ব্যবস্থাপক (যে সংস্থা থেকে বৃদ্ধা ঋণ নিয়েছিলেন)।

শেষ প্রশ্ন, টাকার জন্য মানুষ নানা রকম প্রতারণার আশ্রয় নেয়। আপনি কুড়িয়ে পেয়েও তা ফেরত দিলেন?

কামরুজ্জামান: অন্যের টাকার প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। অন্যায় পথে আয় করা টাকা ভোগ করলে অন্যভাবে কয়েক গুণ অর্থ বেরিয়ে যায়।

Leave a Comment